সুরক্ষিত এবং ন্যায্য

ডার্ক প্যাটার্ন হিসাবে পরিচিত, প্রতারণাপূর্ণ ই-কমার্স বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টাকে অবশ্যই স্বাগত জানাতে হবে। এই পদক্ষেপটি বহু আগে গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল। সেক্টরের স্টেকহোল্ডার এবং গ্রাহক স্বার্থ রক্ষাকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে সরকারের আলোচনার ফলে ডার্ক প্যাটার্ন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খসড়া নির্দেশিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ৫ অক্টোবরের মধ্যে জনসাধারণের মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বিষয়টি নিয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। ২০১০ সালে ব্রিটিশ ‘ইউজার অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত গবেষক’ হ্যারি ব্রিগনাল যখন ‘ডার্ক প্যাটার্ন’ শব্দবন্ধ সর্বপ্রথম চালু করেছিলেন। তখন গুগলকে (এখন আলফাবেট নামে পরিচিত) একটি স্বাস্থ্যকর সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে বিবেচনা করা হতো এবং ফেসবুক (এখন মেটা নামে পরিচিত) দীর্ঘদিন আগে হারিয়ে যাওয়া যোগাযোগ এবং লোকজন একে অপরের থেকে বহু দূরে বসবাস করলেও তাদের ব্যক্তিগত জীবনে অভাবনীয় অ্যাক্সেস চালু করে দেয়। মুনাফা অর্জন করার জন্য ডার্ক প্যাটার্নের উদ্ভব হয়েছে। তবে গোপনীয়তা, সময়, শক্তি এবং খরচ করা অর্থের ব্যাপারে গ্রাহকদের সচেতনতার ব্যাপারে ধোঁয়াশা রয়েছে। তারপর থেকে সর্বব্যাপী হয়ে ওঠা ডার্ক প্যাটার্নের উদাহরণের মধ্যে রয়েছে ফ্লাইটের টিকিট বুক করার সময় ট্রাভেল ইন্সুরেন্সের জন্য আপনা-আপনি টিক চিহ্ন; ই-কমার্স সাইট অ্যাক্সেস করার জন্য ইমেইল বা ফোন নম্বর প্রদান করার বাধ্যবাধকতা, যা পরে টেক্সট মেসেজ বা ইমেইল পাঠাতে ব্যবহার করা হয় এবং এগুলো ব্লক করাও কঠিন হয়ে ওঠে; অথবা জন্মদিনের শুভেচ্ছা, যা ইউজারকে নিজের জন্য উপাহার কিনতে প্রভাবিত করে।

অনলাইন ই-কমার্সের জন্য উদ্বৃত্ত লাভ অর্জনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতনতা তৈরি হওয়ায়, সরকার এই সেক্টর ও এটির ব্যবসার সুপরিচিত পদ্ধতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সন্ধানে সার্বিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কীভাবে ডার্ক প্যাটার্ন শনাক্ত করবেন এবং তা এড়িয়ে যাবেন, এই ব্যাপারে গত মার্চ মাসে ইউরোপীয়ান ডেটা সুরক্ষা বোর্ড একটি নির্দেশিকা ইস্যু করেছিল। গ্রাহকদের ওপর তাদের অজান্তেই নজরদারি চালানো ও প্রতারণা করতে অতি উন্নত উপায়ের বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন সবাইকে সতর্ক করেছিল। ভারতে প্রস্তুত করা নির্দেশিকায় বিশদে উল্লেখ করা হয়েছে কীভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর ভিত্তিহীনভাবে প্রয়োজন তৈরি করা, বাস্কেট স্নিকিং, কনফার্ম শেমিং, পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা এবং সাবস্ক্রিপশনের ফাঁদ শনাক্ত করবেন ও তা প্রতিরোধ করবেন। ২০২১ সালে অ্যাডভার্টাইজিং কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে যে ৫০% এরও বেশি ই-কমার্স সাইট নিজেদের প্রোডাক্ট বিক্রি করার জন্য ডার্ক প্যাটার্ন ব্যবহার করে। বর্তমান যুগকে আক্ষরিক অর্থেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বলা যায়। ইন্টারনেট ভিত্তিক নানা প্রযুক্তি সংস্থা নিজেদের বা তৃতীয় পক্ষের প্রোডাক্ট বিক্রি করার জন্য ডিজিটাল ইউজারদের আচরণ সংক্রান্ত বিশদ তথ্য নিয়মিতভাবে সংগ্রহ করে চলেছে। এই সংস্থাগুলো যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করছে, তা একত্রে বহু দেশের গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্টকেও ছাপিয়ে যাবে। এই সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করতে ভারতের গ্রহণ করা পদক্ষেপ এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র ট্যাক্স সংক্রান্ত ফাঁকি প্রতিরোধ করা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ই-কমার্স সাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে তৈরি হওয়া বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি সহ গ্রাহকদের প্রয়োজনগুলোর ওপর নতুনভাবে যে নজর দেওয়া হচ্ছে, তা ইউজারদের আত্মবিশ্বাসকে আরও মজবুত করে তোলার পাশাপাশি একটি সুরক্ষিত, ন্যায্য, উন্মুক্ত ডিজিটাল পরিবেশ তৈরিতেও সহায়তা করবে।